রোহিত
স্মরজিৎ দত্ত
মাহুত কেরালার ছোট্ট একটি গ্রাম। হরি নামের একজন ওই গ্রামের মাহুত। বাড়িতে পরিবার বলতে সে তার স্ত্রী, মেয়ে, ছেলে আর এ ছাড়া যে আছে তার নাম রোহিত। রোহিতকে হরি ও তার স্ত্রী নিজের ছেলের মতন মানে।
লকডাউনে এত অভাব সেজন্য রোহিতের যত্ন হচ্ছে না , তাই হরি ভাবছে তার এক ব্যবসায়ী বন্ধুর বাড়িতে রেখে আসবে রোহিতকে। শেষে একদিন রোহিতকে নিয়ে হরি তার বন্ধু হাতে দিয়ে এলো। কিন্তু রোহিতকে হারানোর কষ্টটা সহ্য করতে না পেরে সে বাড়ি ফিরে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ল। কয়েক মাস পর হঠাৎ ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ল হরি। ডাক্তার বলল ওকে শহরে নিয়ে যেতে হবে; হাসপাতালে ভর্তি করা জরুরী। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।
ওইদিকে রোহিত হঠাৎ রাস পূর্ণিমার সেই রাতেই চিৎকার করে কাঁদলো। নতুন মনিবের খুব চিন্তা হলো; সেও বোঝার চেষ্টা করল, কিন্তু কুল কিনারা পেল না। শেষরাতে সেই মনিব একটু ঘুমাল। ভোরে বউয়ের চিৎকারে ধরমড়িয়ে উঠলো , তাড়াতাড়ি এদিকটা এসো রোহিত কে পাওয়া যাচ্ছে না।
হরি নশ্বর দেহ বাড়িতে নিয়ে আসতে আসতে প্রায় দুপুর হল। হঠাৎ কয়েকজন এসে বললো রোহিত আসছে। ফুলের দোকান থেকে একটি মালা শুঁড়ে নিয়ে দৌড় দেয় হরির বাড়ির দিকে। বাড়ির কাছাকাছি এসে রোহিত তার গতি কমালো। ধীরে ধীরে শায়িত হরির দেহের কাছে এসে সযত্নে মালাটা পরিয়ে দিলো। তারপর পায়ে পায়ে পিছন দিকে গিয়ে ওখানে যে গাছের তলায় তার ছোটবেলায় বেশিরভাগ কেটেছে সেই নিম গাছের তলায় গিয়ে বসে পড়ল। দুচোখ দিয়ে জলের ধারা বয়ে চলেছে অনবরত। হরির স্ত্রী যে নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল স্বামী চলে যাওয়ায়: সেও এবার কাঁদতে লাগলো রোহিতকে জড়িয়ে ধরে। একসময় শব যাত্রা শুরু হল সবার আগে আগে রোহিত এগিয়ে চলল। দাহ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বসে ছিল। শেষে চিতা তে নদীর জল দিয়ে আসতে ভুল করল না। রোহিত আর কেউ নয় রোহিতএকটি হাতি। যে হরির অন্য ছেলে মেয়ের মতন আরেকটি ছেলে হিসেবে মানুষ হয়েছে হরির কাছে।
বাড়ি ফিরল সবাই, এলো রোহিত ও কিন্তু ফিরে গেল না নতুন মনিবের বাড়িতে। হরি স্ত্রী এগিয়ে এসে রোহিত কে জড়িয়ে ধরে অঝরে কাঁদতে কাঁদতে বলল তোকে আর কোনদিন কারোর কাছে দিয়ে আসব না। মা ছেলের পুনর্মিলনের স্বর্গীয় হরির আত্মা শান্তি পেল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন